‘শুক্রবার আমি খুব ভয় পাই। এদিন আমার বাবাকে হারিয়েছি, বোন জামাইকে হারিয়েছি। এবার হারালাম ছেলেকে। এই দিনটি আসলেই ভয় পাই’— বিড়বিড় করে মুঠোফোনে এভাবেই বলছিলেন সাজ্জাদ আহমেদ শিপন।

সাবেক এই জাতীয় ক্রিকেটার ১১ বছর বয়সী ছেলে শায়ান আহমেদ শুদ্ধকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। গতকাল শুক্রবার (১৬ জুলাই) দুপুরে হঠাৎ করে বাবার কোলেই না ফেরার দেশে চলে যায় প্রাণবন্ত শুদ্ধ। বাবাকে চিকিৎসার কোনো সময়ই দেননি পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শুদ্ধ।

 

তিনদিন ধরে জ্বরে ভোগার পর শুদ্ধ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সঙ্গে ছিল ফুড পয়জনিং ও বমি। রাতে ছেলের লাশ দাফন করেছেন বাবা সাজ্জাদ। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী এবং হৃদয়বিদারক। সাজ্জাদের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে তার গলা ধরে আসছিল বারবার।

কোন কথা ঠিকমতো শেষ করতে পারছিলেন না। নিষ্পাপ ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। শুদ্ধর অসুস্থতা নিয়ে সাজ্জাদ বলেন, ঈদের পরদিন আমরা আউটিংয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে রিচফুড খাই। এরপর শুদ্ধর ফুড পয়জনিং শুরু হয়। বমিও করতে থাকে।

 

ফুড পয়জনিংয়ের মধ্যে জ্বর চলে আসে। শুক্রবার সকাল থেকে শরীর ভালো ছিল না। জ্বর তখনো যায়নি। বমি করছিল। দুপুরে বাথরুম থেকে এসে আমাকে বলে, ‘বাবা খারাপ লাগছে… এরপর তো আমার কোলেই চলে গেল। ছেলের এমন অবস্থা দেখে হতবিহ্বল বাবা সাজ্জাদ দ্রুত উবার ডাকেন।

কিন্তু আসতে দেরি করায় সিএনজি নিয়েই ছোটেন হাসপাতালে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ। বাবা সাজ্জাদ তবুও হাল ছাড়লেন না। এক হাসাপাতাল ঘুরে আরও নিশ্চয়তার জন্য নিয়ে যান স্কয়ার হাসপাতালে। কিন্তু সেখান থেকেও তাকে ফিরতে হয় ছেলের লাশ নিয়েই।

 

জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসক দেখানো হয়েছিল। আরও কয়েকদিন দেখার কথা বলেছিলেন চিকিৎসক। কোনও ধরনের টেস্ট করা হয়নি। তবে পরিবার ধারনা করেছেন ডেঙ্গু হতে পারে। তবে যেহেতু টেস্ট করানো হয়নি এটা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না তারা।

সাজ্জাদ বলেন, চিকিৎসক দেখিয়েছিলাম। ফুড পয়জনিংসহ জ্বরের ওষুধ দিয়েছিল। ভালো না হলে পরবর্তী ট্রিটমেন্টে যেতাম। শুদ্ধ আমাদের সেই সময়টা দেয়নি। শুক্রবার এমনিতে ঢাকাতে চিকিৎসক পাওয়া যায় না, তবুও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ও সেই সময়টাও দেয়নি।

 

সাজ্জাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর। কিন্তু শুদ্ধকে দাফন করা হচ্ছে মানিকগঞ্জ তার স্ত্রীর বাড়ির এলাকায়। সেখানে তাদের পারিবারিক কবরস্থান রয়েছে। শুদ্ধর কবর স্থায়ীভাবে রেখে দিতে চান বাবা সাজ্জাদ। তাই মানিকগঞ্জে দাফন করা হয়েছে। সাজ্জাদ বাংলাদেশের হয়ে দুটি ওয়ানডে খেলেছেন।

অভিষেক হয় ১৯৯৫ সালে ভারতের বিপক্ষে শারজাহতে। একই বছর শারজাহতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেন শেষ ম্যাচ। এ ছাড়া ৩৩টি প্রথম শ্রেণি এবং ৩৯টি লিস্ট এ ম্যাচ খেলেন। বর্তমানে তিনি বিসিবির বয়সভিত্তিক নির্বাচক হিসেবে কাজ করছেন।